তমাল ফেরদৌস, মৌলভীবাজার : মৌলবীবাজারে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
বুধবার দুপুরে প্রতিবেদনটি সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হয়। এতে
অগ্নিকাণ্ডের জন্যে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীর দায়িত্বে অবহেলাকে দায়ী করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে মোট ১০টি বিষয়ের উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে ৭ ও ৮ নম্বর বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগানোর ঘটনার প্রমাণ সেভাবে মেলেনি। তবে বনে কোন ময়লা বা আগাছায় কোনভাবেই আগুন দেওয়া যাবে না বলে পূর্ব থেকে যে নির্দেশ ছিল বিভাগীয় বন কর্মকর্তার তা অমান্য করা হয়েছে।
এই ঘটনায় বনবিভাগের যে তিন জনকে দায়ী করা হয়েছে তাদের একজন বাঘমারা ক্যাম্পের বনপ্রহরী মোতাহার হোসেন। বনায়নের জন্য শ্রমিকরা যখন লতাপাতা পরিষ্কার করছিলেন তখন তা তদারকির দায়িত্ব ছিল তার; কিন্তু আগুন লাগার পর তিনি তা নেভাতে নিজে কোনো উদোগ গ্রহণ করেননি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেননি। কিভাবে আগুন লাগলো তিনি তা বলতেও পারছেন না।
একই রকম দায় রয়েছে লাউয়াছড়ার বিট অফিসার মিজানুর রহমানের। অগ্নিকাণ্ডের সময় তিনিও কোনো পদক্ষেপ নেননি। সেদিন শ্রমিকদের কাজ ও আগুন লাগার ঘটনাসহ সার্বিক বিষয়ে তার তদারকির অভাব পরিক্ষিত হয়েছ।
আরেকজন হলেন, বনবিভাগের সহযোগী সদস্য (কমিউনিটি পেন্ট্রোল দল) মো মহসিন। কাজের তদারকি করার দায়িত্ব তার থাকলেও আগুন লাগার সময় বা পরে ঘটনাস্থল থেকে তিনি দূরে সরে যান। আগুন নেভানোর কোনো উদ্যোগ যেমন নেননি তিনি তেমনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করেননি।
দায়িত্বে থেকে দায়িত্ব পালন না করা, আগুন লাগার পর তা নেভানোর চেষ্টা না করে ঘটনাস্থল থেকে দূরে চলে যাওয়া, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত না করাসহ বিভিন্ন কারণে তদন্ত কমিটি ঘটনার জন্য তাদেরকেই দায়ী করেছে।
তদন্ত প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়েছে, আগুন লাগার ঘটনাটি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অন্য সূত্র থেকে জানতে পেরে সাথে সাথে লাউয়াছড়ার রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামকে দ্রুত আগুন নেভানোর নির্দেশ দেন।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তার মাধ্যমে খবর পেয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা স্টাফ নিয়ে আগুনের সম্মুখভাবে ফায়ার লাইন কাটাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। সেই সঙ্গে যোগ দেয় কমলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস। বনবিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রতিবেদনে আগুন লাগার সময় বলা হয়েছে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১টা এবং আগুন নিভে ২টা ২০ মিনিট থেকে আড়াইটার মধ্যে।
তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, আগুনের সূত্রপাত বনায়নের জায়গা থেকেই। এতে পুড়েছে দেড় একর জায়গা। তবে তেমন বড় কোনো গাছ পুড়েনি। যে জায়গায় বনায়ন করা হবে সে জায়গা পোড়ায় তা বনায়নের মাধ্যমে এবং অন্য জায়গায় বৃষ্টি হলেই নতুন গাছ প্রাকৃতিকভাবে জন্মাবে।
তদন্ত কমিটি বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, বনবিভাগের স্টাফদের উপর তদারকি বাড়াতে হবে। প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া গাছ ও লতাপাতার প্রতি যত্নশীল হতে হবে। বনের উন্নয়নমূলক কাজের সময় গ্যাস লাইট বা দিয়াশলাই সাথে রাখা যাবে না। অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম সাথে রাখতে হবে। সেই সাথে আশপাশের ফায়ার স্টেশনের নম্বর রাখতে হবে।
এদিকে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আমলে নিয়ে দায়িত্বে অবহেলার কারণে তিন জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী।
তিনি জানান, প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দায়ী তিন জনের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বনবিভাগের নিয়ম অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে যেন এমন অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু না ঘটে সেজন্যে তদন্ত কমিটি যে সুপারিশ করছে তা আমলে নিয়ে আরও বেশ কিছু বিষয় নিজ থেকে যুক্ত করা হবে। সবার আগে বন। বনকে রক্ষা করতে হবে। এখানে কারো অবহেলা সহ্য করা হবে না।
উল্লেখ্য, গত ২৪ এপ্রিল লাউয়াছড়ার স্টুডেন্ট ডরমেটরি অংশের পাশে বাঘমারা এলাকায় কাজ করছিলেন কিছু শ্রমিক। সেখানে আগাছা পরিষ্কার করে বন্যপ্রাণী খায় এমন ফলের গাছ লাগানোর জন্য বনবিভাগের অধীনে কাজ করছিলেন তারা। সে জায়গায় দুপর ১২টার দিকে হঠাৎ আগুনের সূত্রপাত হয় এবং ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে বনবিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন। এই ঘটনার তদন্তে বন বিভাগ দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে।
Leave a Reply