বিশেষ প্রতিবেদক, হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে রিচি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মদিনাতুল কুবরা জেরিন হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির আদেশ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর দুপুরে মামলার প্রধান আসামি জাকির হোসেনের উপস্থিতিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক সুদীপ্ত দাশ এই রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ধল গ্রামের দিদার হোসেনের ছেলে জাকির হোসেন (২৫) ও পাটলী গ্রামের আব্দুল হাইয়ের ছেলে নূর আলম। তবে নূর আলম পলাতক রয়েছে। মামলার অপর আসামি রুবেল মিয়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার শিশু আদালতে তার বিচারকার্য চলছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাদি পক্ষের আইনজীবী চৌধুরী আশরাফুল বারী নোমান। মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, জাকির হোসেন একই গ্রামের আব্দুল হাইয়ের মেয়ে মদিনাতুল কুবরা জেরিনকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল; কিন্তু সে তাতে রাজি না হওয়ায় তাকে প্রায় সময় উত্যক্ত করতো।
মদিনাতুল কুবরা জেরিন ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি সকাল ৮টায় নূর আলমের অটোরিকশায় স্কুলে যাচ্ছিল। আগে থেকেই একই অটোরিকশায় ছিল রুবেল মিয়া। পথিমধ্যে তুলে নেওয়া হয় জাকির হোসেনকে; কিন্তু অটোরিকশাটি মদিনাতুল কুবরা জেরিনকে স্কুলে নামিয়ে না দেওয়ায় সে নামার চেষ্টা করে। এ সময় তার সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় অপহরণ চেষ্টাকারীদের। এক পর্যায়ে সে অটোরিকশা থেকে লাফ দিয়ে পড়ে গেলে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
পরে আশেপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ জানুয়ারি সকালে মদিনাতুল কুবরা জেরিন মারা যায়।
প্রথমে এ ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে প্রচার করা হলেও পরবর্তী সময়ে পুলিশ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে। তখন মরদেহ আদালতের নির্দেশে কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করা হয় এবং মদিনাতুল কুবরা জেরিনের পিতা আব্দুল হাই বাদি হয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় ৩ জনকে আসামি দিয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মামলার প্রধান আসামি জাকির হোসেন ও নূর আলমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিও দেয়। ২০২১ সালের ১৮ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
মামলার রায়ে মদিনাতুল কুবরা জেরিনের স্বজনরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে মামলার বাদি তার পিতা আব্দুল হাই রায় শুনে যেতে পারেননি। কয়েকদিন আগে তিনি মারা যান।
মদিনাতুল কুবরা জেরিন রিচি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের সেরা ছাত্রী ছিল। পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় সে এ প্লাস ও বৃত্তি পায়।
Leave a Reply