জেসমিন মনসুর, লন্ডন (যুক্তরাজ্য) : ‘দেশমাতৃকার মুক্তির লক্ষ্যে নিজ সন্তানকে উৎসর্গ করে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সব মুক্তিযোদ্ধার মা। আর একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের দাবিতে গণআদালত গঠন করে বাঙালির হৃদয়ে তিনি জ্বেলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শিখা। তার মৃত্যু নেই-বাঙালির হৃদয়ে তিনি অমর হয়েই থাকবেন।’
শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৯৫তম জন্মদিন উপলক্ষে গত ৩ মে সন্ধ্যায় লন্ডনে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল স্মরণসভায় বক্তাদের মুখে এ সত্যই উঠে আসে ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, যুক্তরাজ্য শাখা আয়োজিত এই সভায় মূল আলোচক ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মাহমুদ এ রউফ ও প্রবীণ সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ আনাস পাশার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিকার মুনিরা পারভিনের পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি সৈয়দ এনামুল ইসলাম, সহসভাপতি, সাংবাদিক নিলুফা ইয়াসমীন ও জামাল আহমেদ খান, সহসাধারণ সম্পাদক জুয়েল রাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুশান্ত দাশ প্রশান্ত, গোলাম কিবরিয়া ও ওয়েলস শাখার সভাপতি সাংবাদিক মোহাম্মদ মকিস মনসুর।
বক্তারা, শহীদ জননীকে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের অন্যতম অভিভাবক উল্লেখ করে বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অসাম্প্রদায়িক মানবিক চেতনার একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেই তিনি নিজের সন্তানকে রণাঙ্গনে উৎসর্গ করেছিলেন। তার এই আত্মত্যাগ নজিরবিহীন।
তারা শহীদ জননীকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অতন্দ্র প্রহরী আখ্যায়িত করে বলেন, যখনই জাতির পতাকা খামচে ধরতে চেয়েছে সেই পুরোনো শকুন, তখনই তিনি এদের প্রতিরোধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে মাঠে নেমেছেন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করে ঘাতকদের বিচার যেভাবে নিশ্চিত করেছেন ঠিক তেমনি তারই চেতনায় বলীয়ান হয়ে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন এই বিচারের রায় কার্যকরে ভূমিকা রেখেছে।
একটি পরিপূর্ণ অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত শহীদ জননীর চেতনায় কাজ করার উপর গুরুত্ব আরোপ করে বক্তারা বলেন, তিনি বিশ্বাস করতেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মগুলোকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত রাখতে পারলে দেশের কল্যাণের জন্য ত্যাগ স্বীকারে ইচ্ছুক মানুষের অভাব হবে না।
বক্তারা আক্ষেপ করে বলেন, স্বাধীনতার এত বছর পরেও মৌলবাদীরা বারবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ায়; কিন্তু এরপরও আমাদের হতাশ হলে চলবে না। জাহানারা ইমাম যে সংগ্রাম শুরু করে গিয়েছিলেন তাকে চালিয়ে যেতে হবে।
আলোচনার শেষ পর্যায়ে যুক্তরাজ্য একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনিরা পারভিন একটি কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে শহীদ জননীকে স্মরণ করেন।