গৌতম বুদ্ধ পাল : শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলা উৎসব ১৪ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এ উৎসবে কেন্দ্র করে দুই দিন আগ থেকে মাধবপুর ও আদমপুর মণিপুরীদের মাঝে বিরাজ করছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। গ্রহণ করা হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে গোটা এলাকা হয়ে উঠবে আনন্দ মুখর। উপজেলার মাধবপুর জোড়ামণ্ডপ প্রাঙ্গণে মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের আয়োজনে ১৭৪ তম এবং আদমপুর ইউনিয়নের তেতইগাঁও সানাঠাকুর মণ্ডপ প্রাঙ্গণে মনিপুরী মৈ-তৈ সম্প্রদায়ের আয়োজনে ৩১ তম রাসোৎসব উদযাপিত হবে।
উৎসব উপলক্ষে উভয় স্থানে বসবে বিরাট মেলা। নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কমলগঞ্জে প্রায় এক মাস আগে থেকেই চলছে রাসোৎসবের প্রস্তুতি। মণিপুরী সম্প্রদায়ের বাড়ি বাড়ি কুমারী কিশোরদের রাস লীলায় অংশগ্রহণ করার জন্যে নৃত্য ও সংগীতের তালিম নেয়ার ধুম পড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে তাবৎ বাড়িতে রাসধারী ও রাস লীলার উস্তাদ এনে শিক্ষা দেয়ার রেওয়াজ প্রচলিত। আনুমানিক ৪০/৫০ জন কিংবা ততোধিক সংখ্যার কিশোরী এ রাস লীলায় অংশগ্রহণ করে থাকে।
মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরাও মেতে উঠে একদিনের এই আনন্দে। মহারাত্রির আনন্দের পরশ পেতে আসা হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দেশী-বিদেশী পর্যটক, বরেণ্য জ্ঞাণী-গুণী লোকজন সহ প্রশাসনিক উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে মণিপুরী পল্লী। রাসোৎসবের জন্য তৈরি সাদা কাগজের নকশায় সজ্জিত মণ্ডপগুলো একটি রাত্রির জন্য হয়ে উঠে মানুষের মিলনতীর্থ। মণিপুরী শিশু নৃত্যশিল্পীদের সুনিপুণ নৃত্যাভিনয় রাতভর মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের। রাতভর চাঁদের আলোয় মায়াবী জোৎস্নায় নূপুরের সিঞ্চনে মুদ্রা তুলবে সুবর্ণ কঙ্কন পরিহীতা রাধা ও গোপিনী রূপের মণিপুরী তরুণীরা। সুরের আবেশে মাতাল হয়ে উঠবে কমলগঞ্জের প্রকৃতি ও মানুষ।
রাসোৎসবের দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে ততোই রাসোৎসবের আকর্ষণ বাড়ছে, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উৎসবে দর্শনার্থীর সমাগম। তুমুল হৈচৈ, আনন্দ উৎসাহ,ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খ ধ্বনির মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মের অবতার পুরুষ শ্রী কৃষ্ণ ও তার সখি রাধার লীলাকে ঘিরে এই একটি দিন বছরের আর সব দিন থেকে ভিন্ন আমেজ নিয়ে আসে কমলগঞ্জবাসীর জীবনে।
মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ জানান, কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর জোড়ামণ্ডপ প্রাঙ্গণে মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের উদ্যোগে গৌড়িয় বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী (বিষ্ণুপ্রিয়া) মণিপুরী সম্প্রদায়ের ১৭৪ তম শ্রী শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলানুসরন উৎসব উপলক্ষে কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সোমবার সকাল ১১টা থেকে গোধূলীলগ্ন পর্যন্ত রাখাল নৃত্য (গোষ্ঠলীলা), সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মতবিনিময় সভা। রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত নট সংকীর্তন, রাত ১১টা থেকে পরদিন মঙ্গলবার ঊষালগ্ন পর্যন্ত শ্রী শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলানুসরণ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। প্রধান আলোচক থাকবেন সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মো আব্দুস শহীদ। বিশেষ অতিথি থাকবেন প্রাক্তন সচিব ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড মিহির কান্তি মজুমদার, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মহাপরিচালক পুর‌্যব্রত চৌধুরী, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মো জামাল উদ্দিন আহমেদ, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো মিজানুর রহমান, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো তোফায়েল ইসলাম, জেলা পরিষদ প্রশাসক মো আজিজুর রহমান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো রফিকুর রহমান, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ডা নন্দকিশোর সিংহ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম মোসাদ্দেক আহমেদ মানিক ও মণিপুরী সমাজকল্যাণ সমিতির সভাপতি প্রতাপ চন্দ্র সিংহ।
এদিকে মহারাস উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি ফাল্গুনী সিংহ ও সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত সিংহ জানান, আদমপুর তেতইগাঁও উন্মুক্ত মঞ্চে মৈ-তৈ মণিপুরী সম্প্রদায়ের ৩১তম রাস উৎসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বুধবার সকাল ১০টায় রাখাল নৃত্য, সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় আলোচনা সভা ও গুণীজন সংবর্ধনা, সন্ধ্যা ৭টায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাত ১১টায় নিপাপালা ও রাত সাড়ে ১১টায় মহারাসলীলা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ কর্ম কমিশন সদস্য উজ্জ্বল বিকাশ দত্ত। বিশেষ অতিথি থাকবেন অতিরিক্ত সচিব ও বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশলী কর্পোরেশনের পরিচালক (বাণিজ্যিক) পোংখাম নীলমনি সিংহ, জেলা প্রশাসক মো তোফায়েল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ জালাল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক ও আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন।

গৌতম বুদ্ধ পাল : লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেট।