এস এম সুরুজ আলী, হবিগঞ্জ : শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক শকুন দিবস। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা কর্মসূচিতে দিনটি পালিত হবে।
বন বিভাগ ও আইইউসিএনের জরিপ অনুযায়ী ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে ১০ লাখ শকুন ছিল; কিন্তু এ সংখ্যা এখন মাত্র ২৬০। এর মধ্যে ১২০টিই হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রেমা-কালেঙ্গা বনাঞ্চলে রয়েছে।
এক সময়ে গরু ও মহিষসহ গবাদিপশুর মৃতদেহ যেখানেই ফেলা হতো সেখানে দেখা যেতো কিছুক্ষণের মধ্যেই আকাশে উড়ছে শকুনের পাল। কিভাবে খবর পেতো তা নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। দ্রুত গতিতে শকুনের দল মৃত গবাদিপশুর মাংস খেয়ে সাবাড় করে দিত।
এভাবে শকুন প্রকৃতি হতে মৃতদেহ সরানোর কাজ করে রোগব্যাধি মুক্ত পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এখন এই প্রাণীই মানবসৃষ্ট কারণে বিলুপ্তের পথে। বিশেষ করে বাংলাদেশে পরিচিত বাংলা শকুন এখন মহাবিপন্ন প্রাণী হিসাবেই চিহ্নিত হয়েছে।
চুনারুঘাটের রেমা-কালেঙ্গায় থাকা শকুন প্রতি বছর ২০/৩০টি বাচ্চা দেয়। ২০১৪ সাল থেকে রেমা-কালেঙ্গায় আইইউসিএন বাংলাদেশের শকুন গবেষণা প্রকল্প গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে শকুনকে নিরাপদ খাবার দেওয়া হয়। গরুর কলিজার নমুনা সংগ্রহ করে বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে দেখছেন, শকুনের জন্য ক্ষতিকর ড্রাগের উপস্থিতি কেমন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিকভাবে শকুনের পরিচর্যা করলে বাংলাদেশের আকাশে আবারও শকুন দেখা যাবে।
রেমা-কালেঙ্গা সহব্যস্থাপনা কমিটির সভাপতি, হবিগঞ্জের সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আকবর হোসেন জিতু জানান, শকুন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিলুপ্তপ্রায় এই প্রাণীকে রক্ষার জন্য ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। রেমা-কালেঙ্গার ময়না বিল এলাকায় এই পাখী যাতে নির্বিঘ্নে বসবাস করতে পারে সে জন্য ২শ উঁচু গাছকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। লোকজন যাতে সেখানে গিয়ে শকুনকে বিরক্ত না করে সে জন্য ব্যবস্থাপনা কমিটিতে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবকদেরকে আলাদাভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার আজীবন সদস্য ও সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড জহিরুল হক শাকিল জানান, রেমা-কালেঙ্গা বাংলাদেশের একটি প্রাচীন বন। এখানে উঁচু ও প্রাচীন গাছ রয়েছে। পাশাপাশি অনেক প্রাণীর বসবাস এই বনে। চোর ও শিকারীদের হাত থেকে এই গাছ ও প্রাণীকে রক্ষা করতে পারলে শুধু শকুনই নয়, সকল প্রাণীই রক্ষা পাবে।