বিশেষ প্রতিবেদক : সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড মো মতিয়ার রহমান হাওলাদার বলেছেন, ‘মৎস্যখাত আমাদের জাতীয় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই বাংলাদেশ সরকার এই খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।’
শুক্রবার সকাল ১০টায় সিলেট মহানগরীর সুবিদবাজারে খান প্যালেস সম্মেলন কেন্দ্রে সিকৃবির মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ আয়োজিত দ্বিতীয় ‘টেকসই মৎস্যখাত’ শীর্ষক ৩ দিনব্যপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন উদ্বোধন করে তিনি এ কথা বলেন।
উপাচার্য আশা প্রকাশ করেন, মৎস্যখাতের উন্নয়নে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন বিশেষ অবদান রাখবে।
‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মৎস্যখাত’ প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে আয়েজিত এই সম্মেলনের উদ্বোধন পর্বে সভাপতিত্ব করেন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড মৃত্যুঞ্জয় কুন্ড। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ড এম এ সাত্তার মন্ডল।
তিনি উল্লেখ করেন, পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে সুলভ মূল্যে যেটি পাওয়া যায় তা মাছ। বাংলাদেশ কৃষক পর্যায়ে মাছের উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মলামাছ ও জলজ খাদ্যের মাধ্যমে অপুষ্টি দূরীকরণে অসামান্য অবদান রেখে বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার পাওয়া বিজ্ঞানী ওয়ার্ল্ডফিশের পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গ্লোবাল লিড ড শকুন্তলা হরাকসিংহ থিলস্টেডকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
এ সময় দেশীয় ছোট মাছের গুণাগুণের কথা ব্যক্ত করে ড শকুন্তলা হরাকসিংহ থিলস্টেড বলেন, দেশীয় মাছের মধ্যে মলামাছ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। বাংলাদেশে পুষ্টি ঘাটতি পূরণে দেশীয় মাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মলামাছ বাংলাদেশ এবং ভারত ছাড়াও কম্বোডিয়া ও মায়ানমারের পাওয়া যায়।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ মাহবুবুল হক, ওয়ার্ল্ডফিশের আঞ্চলিক পরিচালক ক্রিস্টফার রোজ প্রাইস, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের পরিচালক অধ্যাপক ড সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহম্মদ ও সম্মেলন আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড এম এম মাহবুব আলম।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর মৎস্য চাষ ও পুষ্টি, জলজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ, মৎস্যখাত ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং মৎস্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ৪টি বিষয়ভিত্তিক অধিবেশন ও মৎস্য সংক্রান্ত গবেষণার সঙ্গে শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংযোগ নিয়ে একটি বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথমদিন মোট ৫৩টি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপিত হয়। একইসঙ্গে গবেষকরা তাদের গবেষণা কার্যক্রমের উপর ২টি পোস্টার প্রদর্শন করেন।
এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশ, নেপাল, ভারত, ডেনমার্ক, মালেয়শিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও কোরিয়াসহ প্রায় ১০টি দেশ থেকে তিনশর বেশি গবেষক অংশ নিয়েছেন। তারা মৎস্যখাত সংক্রান্ত ১৯৩টি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করবেন।
শনিবার বিকেল ৫টায় সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাফিজ আহমেদ মজুমদার, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, ভারতীয় সহকারী হাই কমিশন সিলেটের সহকারী হাই কমিশনার নিরাজ কুমার জয়সওয়াল, বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাইদ মাহমুদ বেলাল হায়দার, ডিপ সি ফিশার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনাম চৌধুরী ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের পরিচালক অধ্যাপক ড সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহম্মদ।
রবিবার সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশী ও বিদেশ থেকে আগত গবেষক ও অতিথিবৃন্দ সুনামগঞ্জের ‘মাদার ফিশারিজ’ খ্যাত প্রাকৃতিক জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ করবেন।
মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও সম্মেলনের আয়োজক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড মৃত্যুঞ্জয় কুন্ড জানান, ২০১৯ সালে প্রথম টেকসই মৎস্যখাত শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এই সম্মেলনের মাধ্যমে সারাবিশ্বে মৎস্যখাত নিয়ে চলমান গবেষণাগুলো উপস্থাপিত হবে এবং পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আগত গবেষকদের পারস্পরিক মতবিনিময়েরর সুযোগ ঘটবে।
তিনি জানান, আগামীতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মৎস্যখাতের ভূমিকা কি হবে তা নিয়েও আলোচনা হবে।
Leave a Reply