এনা, নিউইয়র্ক : বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হক নিউইয়র্ক সময় সোমবার জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ সাক্ষাৎকালে জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের অসামান্য অগ্রগতি বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দুর্যোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ভূয়শী প্রশংসা করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, তিনি সবসময় বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলার লড়াইয়ে প্রথম সারিতে দেখতে চান।
তিনি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতিতেও বাংলাদেশকে সামনের কাতারে আশা করেন।
শান্তিরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার জন্য তিনি বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কাযর্ক্রমে অন্যতম বৃহৎ সেনা ও পুলিশ সদস্য প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসন্ন সাধারণ পরিষদের সময় অনুষ্ঠিতব্য ‘সার্কেল অব লিডার’ বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জাতিসংঘ মহাসচিব উল্লেখ করেন।
পররাষ্ট্র সচিব জাতিসংঘের মূল্যবোধ ও নীতিমালার প্রতি বাংলাদেশের অবিচল অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল।
তিনি আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় মহাসচিবের অগ্রাধিকার প্রদানের প্রশংসা করেন।
গত ৮ বছরে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যে অগ্রগতি সাধন করেছে পররাষ্ট্র সচিব সে বিষয়ে মহাসচিবকে অবহিত করেন।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (জাতিসংঘ) সাদিয়া ফয়জুন্নেছা ও বাংলাদেশ মিশনের উপ স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ঐদিন সকালে পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হক জাতিসংঘ সদর দফতরে ‘ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইমের’ উপর একটি উচ্চ পর্যায়ের বিতর্কে বক্তব্য রাখেন।
ইতালির স্থায়ী মিশন এবং জাতিসংঘের ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম অফিস-ইউএনওডিসর সহযোগিতায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি এর আয়োজন করেন।
পররাষ্ট্র সচিব তার বক্তৃতায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক-নিদের্শনায় ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড্ ক্রাইম মোকাবেলায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। এ জাতীয় অপরাধ দমনে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী আইনি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। অধিকতর নজরদারি ও কার্যকর বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবৈধ অভিগমন ও মানব পাচার এবং চোরাচালানের প্রবণতা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব আরো বলেন, ‘আমরা স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি এবং এটিকে শক্তিশালী করেছি। মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন মোকাবিলায় আমাদের টেকসই উদ্যোগগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি পেয়েছে।’
মাদক, আগ্নেয়াস্ত্র, বন্যপ্রাণী ও সাংস্কৃতিক সম্পদের অবৈধ পাচার রোধে কার্যকর আঞ্চলিক সহযোগিতার উপর পররাষ্ট্র সচিব গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি ‘ডার্ক ওয়েবের’ বিস্তারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন যা প্রায়শ:ই সন্ত্রাসী ও সহিংস চরমপন্থীরা তাদের কাজে ব্যবহার করে থাকে।
এদিকে সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত বিদেশী কূটনীতিকদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে উপস্থিত কূটনীতিকদের কাছে তিনি কমিটি অব মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স-সিএমডব্লিউর পুনঃনির্বাচনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে নিজের অবস্থান ও অগ্রাধিকারগুলো তুলে ধরেন।
Leave a Reply