শ্রীকান্ত পাল, জকিগঞ্জ : সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় সীমান্ত নদী কুশিয়ারার গত কয়েকদিনের ভাঙ্গনে বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি ও প্রায় আড়াই কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে আরও ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, হাটবাজার, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে জনমনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কুশিয়ারা নদীর ৪১ কিলোমিটারই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত রেখা। তাই ভাঙ্গনের ফলে দেশের ভূমি ক্ষয় হচ্ছে ।
কুশিয়ারা নদীর পানি হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মানিকপুরে ১২০ মিটার, ভাখরশালে ১৫০ মিটার, সরিষাকুড়িতে ২০০ মিটার, ছবড়িয়ায় ১০০ মিটার ও লালগ্রামে ১০০ মিটার, বীরশ্রী ইউনিয়নের সোনাপুরে ২০০ মিটার, পিয়াইপুরে ৮০ মিটার, পীরনগরে ৯০ মিটার, লক্ষীবাজারে ২০০ মিটার, উজিরপুরে ১০০ মিটার ও কোনাগ্রামে ৭০ মিটার, সুলতানপুর ইউনিয়নের গঙ্গাজলে ৪০০ মিটার ও ভক্তিপুরে ৬০০ মিটার, খলাছড়া ইউনিয়নের কাপনা গ্রামে ১০০ মিটার এবং জকিগঞ্জ পৌরসভার মাইজকান্দি এলাকায় ১০০ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণবাঁধ নদীবক্ষে বিলীন হয়ে গেছে।
এছাড়াও দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় উপজেলার বড়চালিয়া, জামডহর, বেউর, ছয়লেন ও কেছরীগ্রাম সহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ বিপদসীমার নিচে থাকায় বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি খুব সহজেই লোকালয়ে প্রবেশ করে পুরো উপজেলা তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর অভিযোগ, বর্ষা মৌসুম শুরু হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাড়াহুড়ো করে বাঁধে মাটি ফেলে; কিন্তু পানির তোড়ে বাঁধ বিলীন হয়ে যায়।
ভাখরশাল গ্রামের জাবেদ আহমদ জানান, গত কয়েক বছরে কুশিয়ারার ভাঙ্গনে ১২ বিঘা ফসলি জমিসহ ৫টি বাড়ি নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেকেই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মেম্বার মানিকপুর গ্রামের রেয়াজুল ইসলাম রাজু ও সাবেক মেম্বার কাজল আহমদ জানান, কুশিয়ারা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে কয়েকশ পরিবার ঘরবাড়ি ও জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বীরশ্রী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার বলেন, নদী ভাঙ্গনের ফলে ঐতিহ্যবাহী লক্ষীবাজার ও বড়চালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বহু স্থাপনা হুমকির মূখে। বীরশ্রী ইউনিয়নের ৫টিসহ উপজেলার প্রায় ২০টি স্থানে বাঁধ নদীতে তলিয়ে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ মেরামত না হলে বন্যার পানিতে পুরো উপজেলা প্লাবিত হবে।
জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বর্ষা মৌসুমের পূর্বে কুশিয়ারা নদীর তীররক্ষা বাঁধ সংস্কার না হলে জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জসহ ৭টি উপজেলাই বন্যায় আক্রান্ত হবে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুশী মোহন সরকার জানান, আসন্ন বর্ষা মৌসুম শুরুর পূর্বে দ্রুত মেরামতের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত স্থান সমূহে ঘরবাড়ি, হাট-বাজার, স্কুল, মসজিদ-মাদরাসা, দোকানপাট ও আবাদযোগ্য জমি হুমকির মুখে। এসব স্থান দিয়ে নদীর পানি প্রবেশ করলে জকিগঞ্জ, কানাইঘাট ও বিয়ানীবাজার উপজেলাসহ সিলেটের বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে জানমালের ক্ষতির আশংকা রয়েছে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কারের জন্য প্রায় ২ কোটি ৯ লাখ টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হুসামুদ্দিন চৌধুরী বলেন, নদীভাঙ্গন জকিগঞ্জের অন্যতম প্রধান সমস্যা। এই ভাঙ্গন রোধসহ জরুরি ভিত্তিতে নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের মানুষকে বন্যা থেকে রক্ষা এখন প্রধান দায়িত্ব। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই কুশিয়ারা নদীর তীররক্ষা কাজ সমাপ্ত করাতে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সংসদে বিষয়টি উত্থাপন ছাড়াও দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এ জনপদের মানুষকে রক্ষার জন্য নদীর তীর সংরক্ষণ ও বাঁধ মেরামতের ডিও লেটারের প্রদানের জন্য ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন বলেও তিনি জানান।
Leave a Reply