নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেটের গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের অনিয়মিত শিক্ষার্থী আজমল হোসেনের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ করা হয়েছে।
সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর (১৫ আশ্বিন) সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে উপজেলার সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী এ অভিযোগ করেন।
এসময় আজমল হোসেনের নেতৃত্বে চালানো হামলায় আহত স্থানীয় একজন সংবাদিকও উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো মারজানুল আযহার জুনেদ জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালে গোয়াইনঘাট উপজেলায় কোনো ‘সমন্বয়ক’ ছিলো না। তবে আমিরুল ইসলাম নামে একজন সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। অথচ ৫ আগস্টের পর থেকে আজমল হোসেন নিজেকে ‘সমন্বয়ক’ দাবি করে ব্যবসায়ীদের নিকট চাঁদা দাবি ও টাকা ছিনতাই করছেন। হামলা চালাচ্ছেন তার অপকর্মের প্রতিবাদকারীদের উপর।। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে গোয়াইনঘাট থানায় একাধিক অভিযোগ দাখিলসহ মানববন্ধন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২৩ সেপ্টেম্বর আজমল হোসেন তার সহযোগী কিবরিয়া আহমদ, রুহুল আমিন ও খসরুল আমিনসহ আরও ৪/৫ জন উপজেলার লেঙ্গুড়া গ্রামের বালুমহালে দুটি নৌকা আটকে ব্যবসায়ীদের কাছে ২ লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করেন; কিন্তু চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীদের উপর বাঁশের লাঠি, স্টিলের পাইপ ও লোহার রড নিয়ে হামলা চালান। এসময় আজমল হোসেন ব্যবসায়ী উজ্জ্বল মিয়ার সাড়ে ২৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনায় উজ্জ্বল মিয়া গোয়াইনঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
আরো উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় একটি পত্রিকার ফেসবুক পেইজে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদ শেয়ার করায় গোয়াইনঘাট কলেজের ডিগ্রি ২য় বর্ষের ছাত্র বাবর উদ্দিন আজমল বাহিনীর হামলার শিকার হন। বাবর উদ্দিনও গোয়াইনঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আজমল হোসেন ও তার সহযোগীদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে গত ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১১টায় গোয়াইনঘাট উপজেলার অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজে জড়ো হয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেন। এ সময় আজমল হোসেন তার সহযোগীদের নিয়ে কলেজে এসে মানববন্ধনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালান ও ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। তখন শিক্ষার্থীরা তাদের ধাওয়া করে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেন। এর কিছুক্ষণ পর আবার ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে আজমল হোসেন ও তার সহযোগীরা ক্যাম্পাসে উপস্থিত স্থানীয় সংবাদকর্মী তানজিল হোসেনের উপর হামলা চালান এবং তাকে ক্যাম্পাসে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় তানজিল হোসেনকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তানজিল হোসেন গোয়াইনঘাটে থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন।
আজমল হোসেন ও তার সহযোগীরা অনৈতিক সুবিধালাভের উদ্দেশ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক-নার্সদের সেবা প্রদান কার্যক্রমে অযাচিতভাবে হস্তক্ষেপ করে আসছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আজমল হোসেন ও তার সহযোগীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তাদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর গোয়াইনঘাটবাসীর ব্যানারে উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে গণস্বাক্ষর গ্রহণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ জনতা পরে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি স্মারকলিপিও প্রদান করেন ।
সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন,-বাবর উদ্দিন, আমিরুল ইসলাম, নাজমুল ফাহিম, তানজিল হোসেন, ফখরুজ্জামান ফলিক, শামীম আহমদ সুমন, আশরাফুল আলম ইমন প্রমুখ।