তাহাফ্ফুজে মাদারিসে কওমিয়া বাংলাদেশ মনে করে, দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন দীনি মাদরাসাগুলো বন্ধ রাখা অনুচিত। কারণ তালিম, দরস, দো’আ, কালাম, হিজফখানা ও মক্তব চলমান ও জারি থাকলে দেশের উপর আল্লাহপাকের রহমত বর্ষিত হবে। কাজেই রমজানের পর যথানিয়মে মাদরাসাগুলোর কার্যক্রম চালু করতে সরকার, কওমি মাদরাসার বোর্ডসমূহ ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগ জরুরি।
শনিবার সকালে তাহাফ্ফুজে মাদারিসে কওমিয়া বাংলাদেশের উদ্যোগে ঢাকায় তেজগাঁও রেলওয়ে জামিয়া ইসলামিয়ায় অনুষ্ঠিত পরামর্শ সভায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত মাদরাসাসমূহের মুহতামিম ও প্রতিনিধিরা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
তাহাফ্ফুজে মাদারিসে কওমিয়া বাংলাদেশের আহ্বায়ক শায়খুলহাদিস ড মুশতাক আহমদের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব মুফতি মোহাম্মদ আলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত পরামর্শ সভায় বক্তারা আরও অভিমত রাখেন, কওমি মাদরাসাগুলোর ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে কোনদিনও উগ্রবাদীতা-জঙ্গিবাদ ইত্যাদি প্রচার-প্রসারের সুযোগ ছিলো না-আগামীতেও থাকবেনা। অসতর্কতাবশত যদি জযবাতি কারো কারো বক্তব্যে এমন কথা এসে যায় তাহলে তা নিঃসন্দেহে কওমি মাদরাসাগুলোর অস্তিত্বের সংকট ডেকে আনবে। তাই বয়ান-বক্তৃতায় সচেতনভাবে এমন কথা পরিহার করতে হবে, যাতে দেশ, সমাজ ও কওমি মাদরাসাগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ হতে পারে। মনে রাখতে হবে, এই অসাবধান বক্তৃতার ছুঁতো ধরে কোথাও কোথাও কওমি আকিদার শত্রুরা মাদরাসাগুলোকে নানারকমের হয়রানির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে, কোথাও কোথাও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মধ্যে আলিমদেরকে জড়িয়ে দিচ্ছে এবং কোথাও কোথাও স্থানীয় পূর্বশত্রুতার প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ নিচ্ছে। পরিণামে মাদরাসা ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষ নানাভাবে হয়রানির মুখোমুখি হচ্ছে। মাদরাসাগুলোকে অতীতের মতো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডমুক্ত রাখতে হবে। নজর রাখতে হবে, যাতে অশুভ কোন চক্র মাদরাসাগুলোতে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। ভেতর-বাইরে এমন পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে মাদরাসাগুলোকে উপরোক্ত নানাবিধ হয়রানি থেকে রক্ষা করা যায়।
পরামর্শ সভায় বিভিন্ন বক্তা বলেন, মাদরাসা কিংবা মাদরাসার শিক্ষকদের উপর অহেতুক কোন হয়রানি যেন না হয় সেজন্য শীর্ষস্থানীয় আলেমদের একটি প্রতিনিধি দল গঠন করে সরকারের সাথে বসে অহেতুক হয়রানি বন্ধের ব্যবস্থা করা জরুরি। কওমি মাদরাসা বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত নীতিমালা এবং ভর্তির সময় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত না হওয়াসহ যেসব ওয়াদা ছাত্ররা করে থাকে সেগুলো প্রত্যেক মাদরাসায় যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। ছাত্র বা শিক্ষক এই নীতি ভঙ্গ করলে তাদের বিরুদ্ধে মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে শাস্তিমূলক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পরামর্শ সভায় কওমি মাদরাসার বর্তমান পরিস্থিতি ও আগামী কর্মপদ্ধতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন, তাহাফ্ফুজে মাদারিসে কওমিয়া বাংলাদেশের যুগ্ম আহ্বায়ক শায়খুলহাদিস হাফিজ মাওলানা ইয়াহিয়া মাহমুদ, যুগ্ম সদস্যসচিব মাওলানা মুজিবুর রহমান ফয়েজি, মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজী, মাওলানা আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ হাসান, মাওলানা মিনহাজুদ্দীন, কবি ও গবেষক সৈয়দ মবনু, ড আ ফ ম খালিদ হোসাইন, মাওলানা আকরাম হুসাইন, মাওলানা আব্দুল হক কাওসারি, মাওলানা কামরুজ্জামান, মাওলানা আজিজুর রহমান, মাওলানা শহিদুল্লাহ কাসেমী, মাওলানা রেজাউল করিম, মাওলানা কলিমুল্লাহ, মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, মাওলানা আবুল বাশার, মাওলানা মুখলিসুর রহমান রাজাগঞ্জী, মাওলানা আব্দুল কাইয়ূম সোবহানী, মাওলানা আব্দুল বাতেন শরিয়তপুরী, মাওলানা হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে ড মুশতাক আহমদ বলেন, কওমি মাদরাসা আবহমানকাল থেকেই একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ, গভীর পড়াশুনার জায়গা, ইলম ও আমলের সুন্দরতম মিলনক্ষেত্র এবং আদব ও আখলাকের সুন্দরতম আদর্শের ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত ছিলো। এখানে ছাত্ররা কখনো উস্তাদের সাথে বেআদবি করা ও উস্তাদের নির্দেশ অমান্য করার চিন্তাও করত না। নজর রাখতে হবে, যাতে কওমি মাদরাসায় আদব-আখলাকের শৃংখলা লঙ্ঘিত না হয়। কওমি মাদরাসাসমূহে মোবাইলের অপব্যবহার রোধ করতে হবে। কওমি শিক্ষার্থীদের যারা শিক্ষকতা করতে আগ্রহী তাদের জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সম্মানজনকভাবে কওমির ছাত্রদেরকেও স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে বহির্বিশ্বে গমনের সুযোগ দিতে হবে।-সংবাদ বিজ্ঞপ্তি